
শীতে ত্বকের যত্ন নেওয়া অনেকের জন্য চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের শীতকাল আরামদায়ক হলেওত্বকের জন্য তা একেবারেই সুখকর নয়। ঠান্ডা বাতাস, কম আর্দ্রতা ও অতিরিক্ত গরম পানিতে গোসল – এই তিনটির সম্মিলিত প্রভাবে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ, ফাটা ও বর্ণহীন। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৭২% মানুষ শীতে ত্বকের আর্দ্রতা হারান, যার ফলে দেখা দেয় ফাটাভাব, র্যাশ ও বার্ধক্যের আগাম লক্ষণ।
তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। মাত্র কয়েকটি ধাপে নিয়মিত স্কিন কেয়ার করলে শীতেও ত্বক থাকবে কোমল, উজ্জ্বল ও সুস্থ। এই ব্লগে থাকছে ৫টি সহজ ধাপের স্কিন কেয়ার রুটিন, যা বিজ্ঞানসম্মত ও বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য উপযোগী।
ধাপ ১: শীতে ত্বকের যত্নে ক্লিনজিং সঠিকভাবে বেছে নিন

শীতকালে ক্লিনজিং বাদ দিলে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি, তেল ও মৃত কোষ পোরে আটকে স্কিনকে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। তবে ক্লিনজার বেছে নিতে হবে মাইল্ড ও হাইড্রেটিং।
শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম-বেসড ক্লিনজার উপযুক্ত, যাতে থাকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড বা গ্লিসারিন। এটি ত্বক পরিষ্কার করে, কিন্তু প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে না।
অন্যদিকে, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার স্যালিসিলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করলে পোর গভীর থেকে পরিষ্কার থাকে এবং ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
শীতকালে ক্লিনজিং বাদ দিলে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি, তেল ও মৃত কোষ পোরে আটকে স্কিনকে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। তবে ক্লিনজার বেছে নিতে হবে মাইল্ড ও হাইড্রেটিং।
🔗 Suggested Product: CeraVe Hydrating Facial Cleanser
শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম-বেসড ক্লিনজার উপযুক্ত, যাতে থাকে হায়ালুরনিক অ্যাসিড বা গ্লিসারিন।
🔗 Buy Now: Cetaphil Gentle Skin Cleanser
অন্যদিকে, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য স্যালিসিলিক অ্যাসিড যুক্ত ক্লিনজার উপকারী।
🔗 Recommended: COSRX Salicylic Acid Daily Gentle Cleanser
ধাপ ২: হাইড্রেশন সেরামের স্ট্র্যাটেজি

শীতে ত্বকের ভেতর থেকে আর্দ্রতা ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হায়ালুরনিক অ্যাসিড একটি এমন উপাদান যা ত্বকে পানি ধরে রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেটেড রাখে।
প্রতিদিন একটি হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত সেরাম ব্যবহার করলে ত্বক নরম, উজ্জ্বল ও হেলদি থাকে। এ ছাড়া সিরামাইড যুক্ত সেরাম স্কিনের ব্যারিয়ার মেরামত করে এবং সেনসিটিভিটি কমায়।
সপ্তাহে একবার AHA ও BHA যুক্ত এক্সফলিয়েটিং সেরাম ব্যবহারে মৃত কোষ দূর হয়, পোর ছোট দেখায় এবং স্কিন টোন আরও মসৃণ হয়।
সেরাম ব্যবহারের আগে স্কিন হালকা ভেজা থাকলে হায়ালুরনিক অ্যাসিড আরও কার্যকরভাবে কাজ করে।
হায়ালুরনিক অ্যাসিড একটি এমন উপাদান যা ত্বকে পানি ধরে রাখে।
🔗 Buy: The Ordinary Hyaluronic Acid 2% + B5
সিরামাইড যুক্ত সেরাম স্কিন ব্যারিয়ার মেরামত করে।
সপ্তাহে একবার AHA ও BHA সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
🔗 Try This: The Ordinary AHA 30% + BHA 2% Peeling Solution
ধাপ ৩: শীতে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার কিভাবে ব্যবহার করবেন
শীতে ময়েশ্চারাইজার ছাড়া স্কিন কেয়ার অসম্পূর্ণ। সঠিক ময়েশ্চারাইজার ত্বকের পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং হাইড্রেশন লক করে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য শিয়া বাটার, প্যানথেনল বা কোলয়েডাল ওটমিল সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করা ভালো। এগুলো স্কিনে গভীরভাবে কাজ করে এবং ফাটাভাব দূর করে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা জেল-বেসড ময়েশ্চারাইজার বেছে নেওয়া উচিত। এগুলো নন-গ্রিসি এবং স্কিনে তেল জমতে দেয় না।
ময়েশ্চারাইজার সবচেয়ে ভালো কাজ করে যদি তা গোসলের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে লাগানো হয়। এই সময়ে স্কিন সবচেয়ে শোষণক্ষম থাকে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য শিয়া বাটার, প্যানথেনল বা ওটমিল সমৃদ্ধ ক্রিম উপকারী।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা জেল-বেসড ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করুন।
🔗 Recommended: Neutrogena Hydro Boost Water Gel
ধাপ ৪: সান প্রোটেকশন নন-নেগোশিয়েবল

শীতের মৃদু রোদকে harmless মনে করা ভুল। UV রশ্মি শীতেও ত্বকের গভীরে পৌঁছে কোষ ক্ষয় করে, কালচে ভাব ও বয়সের ছাপ তৈরি করে।
প্রতিদিন একটি SPF 30 বা তার বেশি PA+++ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত, যা UVA ও UVB দুই ধরনের রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।
সানস্ক্রিনের ১৫ মিনিট আগে একটি ভিটামিন সি সেরাম ব্যবহার করলে স্কিন আরও উজ্জ্বল ও প্রোটেক্টেড থাকে। এটি স্কিনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপোর্ট দেয়।
ঠোঁটকেও ভুলে গেলে চলবে না। ঠোঁট ফাটার অন্যতম প্রধান কারণ হলো সূর্যের প্রভাব। তাই SPF 15 যুক্ত লিপ বাম প্রতিদিন ব্যবহার করুন।
ভিটামিন সি সেরাম সানস্ক্রিনের আগে ব্যবহার করলে আরও ভালো।
ঠোঁটের জন্য লিপ বাম ব্যবহার করুন।
ধাপ ৫: লিপ কেয়ার সিক্রেটস

শীতে ঠোঁট দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ফেটে যায়। শুধু লিপ বাম দিয়ে এটা সম্পূর্ণ সমাধান হয় না। দরকার একটি পূর্ণ লিপ কেয়ার রুটিন।
প্রথমে লিপ স্ক্রাব দিয়ে মৃত কোষ তুলে ফেলুন। চিনি ও বাদাম তেল দিয়ে তৈরি স্ক্রাব ঠোঁটকে নরম রাখে।
এরপর একটি হায়ালুরনিক অ্যাসিড যুক্ত লিপ মাস্ক ব্যবহার করলে ঠোঁট ভেতর থেকে আর্দ্র হয়।
সবশেষে, রাতে ঘুমানোর আগে একটি নাইট বাম ব্যবহার করলে ঠোঁট থাকবে সারারাত সুরক্ষিত ও কোমল।
এই তিন ধাপের রুটিন সপ্তাহে ২ বার অনুসরণ করলেই ঠোঁট থাকবে ফাটা ও রুক্ষতা ছাড়া।
প্রথমে লিপ স্ক্রাব ব্যবহার করুন।
শীতের জন্য বাংলাদেশি বিশেষ টিপস

শীতে শুধু বাইরের যত্ন নয়, ভেতর থেকেও ত্বকের যত্ন নেওয়া জরুরি। কিছু সহজ অভ্যাস আপনাকে শুষ্কতা, র্যাশ ও ফাটাভাব থেকে রক্ষা করতে পারে। নিচের এই টিপসগুলো বিশেষভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য কার্যকর।
গোসলের সময় খুব গরম পানি ব্যবহার না করাই ভালো। গরম পানি স্কিনের প্রাকৃতিক তেল দ্রুত সরিয়ে নেয়, ফলে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। এর বদলে হালকা গরম পানিতে ১ চামচ বডি অয়েল মিশিয়ে নিন। এতে গোসলের সময়ই ত্বক কিছুটা হাইড্রেটেড থাকে এবং গোসলের পর শুষ্কতা কমে যায়।
খাবারে যোগ করুন পুষ্টিকর কিছু উপাদান – যেমন বাদাম, তিল, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, চিয়া সিড, পালং শাক ও লাল শাক। এই খাবারগুলোতে থাকা ওমেগা-৩, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেট করে এবং প্রাকৃতিক গ্লো বাড়ায়।
সপ্তাহে একবার একটি ওটমিল স্মুথিং মাস্ক ব্যবহার করুন। ওটমিল প্রাকৃতিকভাবে ইনফ্লেমেশন কমায়, ত্বককে শান্ত করে এবং রুক্ষতা দূর করে। আপনি চাইলে এতে মধু বা দুধ মিশিয়ে হোমমেড মাস্ক তৈরি করতে পারেন।
শীতে অনেকেই পানি কম পান করেন, কারণ তৃষ্ণা কম লাগে। কিন্তু এটি ত্বকের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। পানি শরীর থেকে টক্সিন বের করে এবং স্কিনকে ভেতর থেকে হাইড্রেট রাখে। তাই চেষ্টা করুন দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে – এটি স্কিনকে প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করবে।
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো নিয়মিতভাবে পালন করলে শুধু ত্বক নয়, পুরো শরীরই থাকবে সুস্থ, সতেজ ও উজ্জ্বল।গোসলের সময় বডি অয়েল ব্যবহার করুন।
কখন ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যাবেন?
ত্বকে যদি ফাটাভাব, র্যাশ বা জ্বালাভাব ৭ দিনের বেশি থাকে, অথবা চুলকানি খুব বেশি হয় – তাহলে ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
হালকা সমস্যা থাকলে সেনসিটিভ স্কিনের জন্য তৈরি মাইল্ড ফর্মুলা পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে সাধারণত অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
🔗 Reference: When to See a Dermatologist – AAD
কেন এই স্কিন কেয়ার রুটিন কাজ করে?
এই রুটিনটি বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী ডিজাইন করা। এর প্রতিটি ধাপে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত উপাদান ব্যবহৃত হয়, যেমন হায়ালুরনিক অ্যাসিড, সিরামাইড, স্যালিসিলিক অ্যাসিড ও শিয়া বাটার।
এই উপাদানগুলো একসাথে ত্বককে পরিষ্কার, হাইড্রেট, ময়েশ্চারাইজ ও প্রটেক্ট করে। ফলে ত্বকে ফাটাভাব, শুষ্কতা ও বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না।
উপসংহার
শীতকালের রুক্ষতা, ফাটা ত্বক বা ঠোঁটের শুষ্কতা – এগুলো সাধারণ সমস্যা হলেও সময়মতো যত্ন না নিলে তা বড় সমস্যায় পরিণত হতে পারে। তবে ভালো খবর হলো, প্রতিদিন মাত্র কয়েকটি সহজ ধাপ মেনে চললেই এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আপনার স্কিন কেয়ার রুটিনে যদি নিয়মিত ক্লিনজিং, হাইড্রেশন, ময়েশ্চারাইজিং, সান প্রোটেকশন ও লিপ কেয়ার থাকে, তাহলে ত্বক থাকবে নরম, মসৃণ ও দীপ্তিময় – একদম পার্লার ছাড়াই। মনে রাখবেন, ত্বকের যত্ন মানে শুধু রূপচর্চা নয় – এটি একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যা আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক প্রশান্তিও বাড়ায়।
শীতকালে ত্বক অতিরিক্ত আর্দ্রতা হারায় বলে বয়সের ছাপ পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই আগে থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। ত্বকে যত্ন নেওয়া মানেই বার্ধক্যের প্রভাব ধীরে আনা, স্কিনকে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেওয়া।
মনে রাখবেন:
“শুষ্ক ত্বকই বার্ধক্যের প্রথম চিহ্ন।”
তাই নিয়মিত স্কিন কেয়ার করুন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন, পুষ্টিকর খাবার খান এবং প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট বেছে নিন আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী।
আজকের যত্নই আপনার আগামী দিনের উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যবান ত্বকের পথ তৈরি করবে।
Add comment